আমরা বাঙ্গালী জাতি, সংস্কৃতি আমাদের রক্তে মিশে রয়েছে । লুঙ্গি বাঙ্গালী সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ । আর বাঙ্গালী বিজ্ঞান চর্চা করলে তো তাঁর সংস্কৃতিমনা ভাব থাকবেই । চাঁদে লুঙ্গি পরে যাওয়ার পরিকল্পনা করতেই পারে । তো আসুন দেখা যাক যে লুঙ্গি পরে চন্দ্র অভিজান সম্ভব কিনা ?
না । দুঃখিত বাঙালি লুঙ্গি পরে চাঁদে যাওয়া সম্ভব নয় । তবে লুঙ্গি পরে কেউ চাঁদে যেতে চাইলে সেটা সে পারবে কিন্তু তাঁর বেঁচে ফিরে আসা সম্ভম হবে না ।
অসংখ্য কোষ দিয়ে মানব দেহ গঠিত। প্রতিটি কোষে রয়েছে কোষ গহ্বর । কোষ গহ্বর শরীরের বাইরের দিকে প্রচণ্ড চাপ দেয় । আর এই চাপের কারনেই আমরা স্বাভাবিকভাবে পৃথিবীতে বেঁচে থাকতে পারি ।
আমাদের চারপাশে বায়ুর সমুদ্রে । বাতাসের ওজন আছে, সে ওজন এর কারনে বাতাস চাপ দিচ্ছে আমাদের শরীরের উপর । এক কেজি বা দুই কেজি ওজনের চাপ এটা নয়, এই হিসাব মন আর টন দিয়ে করতে হবে । তাহলে এই বিপুল পরিমান চাপ নিয়ে আমরা টিকে আসি কি করে ? টিকে আসি ওই কোষ গহ্বরের কারনে । কোষ গহ্বরের বহির্মুখী চাপ আর বায়ুর অন্তর্মুখী চাপ সমান হয়ে যায় । এর ফলেই আমাদের জীবন খুব আরাম আয়েশে পার হয়ে যায় ।
আমারা জানি যে চাঁদে কোন বায়ুমণ্ডল নেই, তাই বায়ুর চাপও নেই । এখন কেউ যদি চাঁদে যায় তবে সেখানে বায়ুর চাপ না থাকলেও তাঁর কোষ গহ্বরের চাপ তো থাকবেই । সেই ভেতরের কোষ গহ্বরের চাপে কোষগুলো সব বাইরে ছিটকে বেড়িয়ে আসবে । মৃত্যু আবশ্যক । আর রক্তনালীতে রক্ত যে চাপ দেয় তাতে মুহূর্তেই ছিঁড়ে যাবে রক্তনালী । মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণের কারনে কিছু বুঝে উঠার আগেই মৃত্যু ঘটবে আপনার ।
মহাকাশচারীদের বিশেষ পোশাক পরার কারন এখন পরিষ্কার ? এই বিশেষ শক্ত পোশাকে চলা চল করা খুব কষ্টকর । মটেও আরামদায়ক নয় । কিন্তু নিরুপায় হয়ে পরতে হয় এই পোশাক । এই স্পেসশুটের ভেতরে কৃত্রিম উপায়ে বায়ুর চাপ বজায় রাখা হয় । আবার অত্যাধিক ঠাণ্ডা বা গরম থেকে বাঁচায় এই স্পেস শুট । ভিতরে কৃত্রিম উপায়ে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ রাখা হয় । এই পোশাকটিতে এমনকি পশ্রাব এর জন্যও সুব্যাবস্থা রাখা থাকে । লুঙ্গি পরলে যেটা সম্ভব হবে না ।
তবে হ্যাঁ, আমরা বাঙ্গালিরা তো নিয়ম মানতে নারাজ এবং কল্পনাকে জয় করতে আদম্ম চেষ্টা করি সুতরাং আমার মত এমন কল্পনাকে বাস্তবে রুপ দেওয়ার জন্য আপনি স্পেসশুটের উপরে অতিরিক্ত হিসেবে লুঙ্গি পরতে পারেন । এতে খুব সামান্য অসুবিধা হবে কিন্তু আমাদের কল্পনার বাস্তব রুপ দেওয়া যাবে ।
এখন আসলেই চাঁদে সুধু লুঙ্গি পরে গেলে অমনটি হবে কিনা তার দুটি বাস্তব উদাহরন পৃথিবীতে বসে পাবার চেষ্টা করি । কি বলেন ?
উদাহরন ১:
সমুদ্রের অনেক গভীরে যেসব মাছ বাস করে তাদেরকে জীবিত অবস্থায় উপরে আনা সম্ভব হয় না । এর কারণ হচ্ছে পানির গভীরতা বৃদ্ধি পেলে এর চাপও বৃদ্ধি পায় । গভীর জলের মাছেরা বেশি চাপে থাকতে অভ্যস্ত, সেই বেশি চাপ কমে আসলে সেটা সয়ে ওঠতে পারে না ফলে অল্পতে মারা যায় ।
উদাহরন ২:
মাছ রেখে এবার মানুষের কথা ভাবুন । পর্বতারোহীরা যখন এভারেস্ট বা তেমন উঁচু চুড়ায় ওঠে তখন কারো কারো নাক দিয়ে রক্ত ঝরে । কারণ পৃথিবী থেকে যত উপরে ওঠা যায় বায়ুর চাপ ততই কমতে থাকে । এই সকল পর্বতারোহীদের নাকের কোষের প্লাজমা মেমব্রেন এতটা শক্ত নয়, যে কারনে কয়েক মাইল উচ্চতাতেই সে কোষ ফেটে যায় এবং রক্ত ঝরে ।
মূলত চাঁদে যেতে কি কারনে এই মূল্যবান বিশেষ পোশাক পরতে হয় তার আলোকপাতই ছিল মূল উপপাদ্য । আশা করি সবাই বুজতে পারছেন ।
Post a Comment