অদ্ভুতুড়ে 1:07 AM

পানির আরেক নাম জীবন । পৃথিবীতে এত যে জীব বৈচিত্র্য তার মূলে হচ্ছে এই পানি । কিন্তু পৃথিবীর এই সমগ্র জলের উৎস সম্পর্কে আমরা কতটা জানি ?  আমাদের এই পৃথিবীতে জলের পরিমান এত বেশি কেন ? পানি বলতে আমরা সাধারনত পানির তরল অবস্থা বুঝিয়ে থাকি । কিন্তু পানি তরল, কঠিন এবং বাষ্পীয় এই তিন অবস্থায় পাওয়া যায় । তো পৃথিবীতে এত পানি কেন সেই প্রশ্নে যাওয়ার আগে জেনে নেই এখানে এত পানি কেন তরল অবস্থায় আছে ? কেন কঠিন বরফ কিংবা বায়বীয় বাষ্প আকারে নয় ?

সোলার সিস্টেম

এর উত্তরে বলতে হয় -‘পৃথিবীটা মহাকাশে যে স্থানে আছে তাতে পানি তরল হিসেবে অধিক থাকাটাই স্বাভাবিক । পৃথিবী যদি তার এই অবস্থান থেকে যদি আরও একটু সূর্যের কাছাকাছি হতো তবে কোনো জল থাকত না । আবার যদি একটু দূরে হতো তবেও জলের অস্তিত্ব খুজে পাওয়া যেত না । আমাদের পৃথিবীটা মহাকাশের "প্রাণবান্ধব এলাকার স্কেলের" এই সুবিধাজনক অবস্থানে আছে বলেই আমাদের প্রাণ বিকাশ সম্ভব হয়েছে । আর পানির কারণেই সে সম্ভাবনা বাস্তবায়ন হয়েছে । তবে পৃথিবীতে আমাদের আরও একটা মজার সুবিধা রয়েছে । পৃথিবীর এমন অবস্থানে রয়েছে যে সেখানে পানি তো থাকেই সাথে সাথে তিনটা অবস্থানেও অর্থাৎ কঠিন, তরল, বায়বীয় অবস্থায় থাকে । ভিন্য যে কোনো গ্রহে যা সত্যিই বিরল । 

এখন ব্যাপার হচ্ছে পানি না হয় পৃথিবীর সুবিধাজনক অবস্থানের কারণে তরল অবস্থায় আছে । কিন্তু পৃথিবীতে এতো এতো পানির উৎস কী ? এর উত্তর হচ্ছে  ‘মহাসাগরে এতো জল কিভাবে এলো তার জন্য অন্তত চার রকমের জলদ-গম্ভীর ব্যাখ্যা আছে । মহাকাশ থেকে আমাদের পৃথিবীটাকে দেখতে নীলাভ রঙে সৌম্যময় মনে হয় । পৃথিবী প্রারম্ভিক কালে কিন্তু এরকম নীলাভ ছিলো না । তখন পৃথিবী ছিলো উতপ্ত একটা আগুনে গোলা । পৃথিবীর প্রারম্ভে অজস্র গ্রহাণু এবং উল্কাপিন্ড ধরিত্রীতে পতিত হয়েছিলো । একটি তত্ত্ব বলে যে তাদের অনেকেই ছিলো জলপূর্ণ, আদি পৃথিবীতে এতো জল এনেছিলো সেসব গ্রহাণু এবং উল্কাপিন্ডরা ।
Add caption

ভিন্ন একটি তত্ত্বে বলা হয় ভূপৃষ্ঠের নিচে বিভিন্ন শিলাতে অক্সিজেন ও হাইড্রোজেন অটকা পড়ে ছিলো । অক্সিজেন অক্সাইড অবস্থায় ছিলো । এই সুত্র মতে শিলার মধ্যে অবস্থিত অক্সিজেন ও হাইড্রোজেন রাসায়নিক বিক্রিয়া করে পানি গঠন করে । এ পানি পরবর্তীতে আগ্নেয়গিরির বিষ্ফোরণের সাথে সাথে বাষ্প আকারে বের হয়ে আসে । আর এই বাষ্প পরবর্তীতে বৃষ্টি আকারে পতিত হয়ে তৈরি করে সাগর-মহাসাগর । একটা সাম্প্রতিক তত্ত্বে বলা হয় এতো পানির উৎস আসলে পৃথিবী জন্মের সময় থেকেই । এই সৌরজগতে পৃথিবী ও অন্যান্য গ্রহ গঠিত হয় এক বিশাল মহাজাগতিক ধূলি-পূঞ্জ থেকে । জলকণারা এই ধূলিদের সাথে যুক্ত হয়ে একেকটা গ্রহ তৈরিতে অংশ নেয় । এতো জলের নাকি সেখান থেকেই পেয়েছি আমরা ।

আরেকটা উল্লেখযোগ্য তত্ত্ব বলা হয়েছে যে পানি এসেছে প্রকৃত পক্ষে ধূমকেতু থেকে । ধূমকেতুকে বিভিন্ন সময় ঝাড়ুর সাথে তুলনা দেয়া হয়েছে । কারণ ঝাড়ুর মতো দেখতে ধূমকেতুর একটি লেজ থাকে । আসলে এই লেজটি মুলত জলীয়বাষ্পের ও ধূলির ধারা ছাড়া অন্য কিছু নয় । ধূমকেতুর প্রধান অংশটি হলো তার নিউক্লিয়াস, যা থেকে এই জলীয়বাষ্প আসে । ধূমকেতুর মূল এই নিউক্লিয়াসের অন্যতম উপাদান হচ্ছে বরফ । একেকটা ধূমকেতু সাগর পরিমাণ পানি ধারণ করতে পারে । তাই ধূমকেতু থেকে পৃথিবীতে পানি আশার মতবাদটি অত্যন্ত আকর্ষণীয় । কিন্তু এই তত্ত্বটিতে একটি বড় তর্ক ছিলো । তা হচ্ছে পৃথিবীর জল আর ধূমকেতুর জলের রাসায়নিক অমিল । মহাসাগরের জল যদি ধূমকেতু থেকেই আসে তাহলে রাসয়নিক ভাবে দুই জলই এক হওয়ার কথা । কিন্তু ২০১১ সালের আগ পর্যন্ত দেখা গেছে যে ধূমকেতুর জল পৃথিবীর জল থেকে রাসায়নিকভাবে ভিন্ন । কিন্তু রাসায়নিক ভাবে জলের ভিন্নতার মানে আসলে কি ?



Normal Water vs Heavy Water
ভারী জলঃ
সব পানি সমান নয় । কারণ সব হাইড্রোজেন এক না। এখানে চলে আসে আইসোটোপের কথা। হাইড্রোজেন সবচাইতে সরলতম পরমাণু । কি আছে এতে ? একটি প্রোটনের চারপাশে বনবন করে ঘুরছে একটি মাত্র ইলেকট্রন। কিন্তু কোন কোন হাইড্রোজেনের ভেতরের ঘটনা একটু ভিন্ন । তাদের ক্ষেত্রে ইলেকট্রন ঘুরছে, তবে একটা প্রোটনের সাথে সাথে একটা নিউট্রনও রয়েছে কেন্দ্রে । সাধারণ হাইড্রোজেনের তুলনায় এদের পারমাণবিক ভর দ্বিগুণ । এই ভারী হাইড্রোজেন আসলে হলো হাইড্রোজেনেরই একটি আইসোটোপ । বেশ রাশভরী নাম এই আইসোটোপের – ডিউটোরিয়াম। সাধারণ জল হাইড্রোজেন আর অক্সিজেন দিয়ে তৈরি । ডিউটোরিয়াম অক্সিজেনের সাথে যুক্ত হয়ে যে জল তৈরি করে তাকে বলা হয় ভারী জল । ডিউটোরিয়াম জল, সাধারণ জলের চেয়ে দশ শতাংশ ভারী । দেখা গেছে, সমুদ্রের মাঝে প্রতি ৩২০০ পানির অণুর মাঝে একটি হলো ভারী জল । তারমানে পৃথিবীর জল যেখান থেকেই আসুক না কেন, সেখানেও ভারী জল একই অনুপাতে থাকবে । যেসব তত্ত্ব বলছে যে পৃথিবীর পানি বাইরে থেকে এসেছে, তাদের এই অনুপাতের একটা যৌক্তিক ব্যাখ্যা দিতে হবে । মজার ব্যাপার হলো, গ্রহাণু এবং কোন কোন উল্কা এই নির্দিষ্ট অনুপাতের ভারি জল বহন করে ।

১৯৮০ সালের আগ পর্যন্ত ধূমকেতু তত্ত্ব পৃথিবীতে জলের আবির্ভাবের জন্য বেশ আশানুরূপ ছিলো । কারণ ১৯৮০ সালের আগ পর্যন্ত ধূমকেতুর সঠিক রসায়ন জানা ছিলো না বিজ্ঞানীদের । যখন হ্যালীর ধূমকেতু এবং হায়াকুতাকি ধূমকেতুর রাসায়নিক গঠন প্রথম মাপা হলো, দেখা গেল সেখানে ভারী পানির অনুপাত পৃথিবীর ভারী পানির অনুপাতের চাইতে বেশি । তার মানে, ‘হ্যালীর মতো’ ধূমকেতু সম্ভবত কখনোই সমুদ্রের জলের উৎস হতে পারবে না । পৃথিবীতে জল আবির্ভাবের ধূমকেতু তত্ত্ব খুব একটা টেকসই বলে মনে হচ্ছিলো না সে সময়টাতে ।

Post a Comment

'; (function() { var dsq = document.createElement('script'); dsq.type = 'text/javascript'; dsq.async = true; dsq.src = '//' + disqus_shortname + '.disqus.com/embed.js'; (document.getElementsByTagName('head')[0] || document.getElementsByTagName('body')[0]).appendChild(dsq); })();
Powered by Blogger.