২০১২ সালে ঘরের মাঠে এশিয়া কাপের ফাইনালে পাকিস্তানের কাছে মাত্র ২ রানে হেরে স্বপ্নভঙ্গ ঘটে বাংলাদেশের। চার বছর পর ঘরের মাঠেই বাংলাদেশের আরেকটি স্বপ্ন পূরণের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে পাকিস্তান। এশিয়া কাপের গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে বুধবার পাকিস্তানের মুখোমুখি হবে স্বাগতিক বাংলাদেশ। সেই ম্যাচে জিততে পারলেই ফাইনালে পা রাখবে মাশরাফি বিন মুর্তজার দল।

বাংলাদেশের জন্য বুধবারের ম্যাচটি ফাইনালে উঠার মঞ্চ হলেও পাকিস্তানের জন্যও ম্যাচটি সমান গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের কাছে হেরে গেলেই ফাইনালে উঠার সম্ভাবনা শেষ হয়ে যাবে- এমন সমীকরণ মাথায় নিয়েই মাঠে নামবে শহিদ আফ্রিদির দল।
বাংলাদেশ যে ফাইনালের বিকল্প ভাবছে না সেটি মাশরাফির কথায়ই স্পষ্ট। বুধবারের ম্যাচের আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে মাশরাফি বলেন, ‘আমাদের ফাইনাল খেলার অবশ্যই খুব ভালো সুযোগ রয়েছে। শেষ দুটি ম্যাচ যেভাবে খেলেছি আমরা, একইভাবে খেলতে পারলে নিঃসন্দেহে ফাইনালে যাওয়া সম্ভব। গত দুই ম্যাচে অনেক ভুল ছিল, তারপরও ম্যাচ জিতেছি। আমার মনে হয়, ঠিক সময় ঠিক কাজ করতে পেরেছি বলেই সেটা হয়েছে। তবে পরের ম্যাচে এমনটা যেন না হয় সেটাই আমাদের লক্ষ্য।’
পাকিস্তানের বিপক্ষে মাঠে নামার আগে অনেকটা স্বস্তিতে রয়েছে বাংলাদেশ। টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচে ভারতের কাছে বড় হার দিয়ে এশিয়া কাপের মিশন শুরু করলেও পরের দুই ম্যাচে যথাক্রমে আরব আমিরাত ও শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ায় টাইগাররা। গত বছর ঘরের মাঠে পাকিস্তানকে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজে ৩-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ করার পর একমাত্র টি-টুয়েন্টিতেও জয় পায় টাইগাররা। ফলে বুধবার এটিও ‘উজ্জীবিত’ করবে স্বাগতিক শিবিরকে।
অন্যদিকে পাকিস্তান কিছুটা হলেও চাপের মুখে রয়েছে। নিজেদের প্রথম ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে মাত্র ৮৩ রানে গুটিয়ে গিয়ে ৫ উইকেটের বড় ব্যবধানের হার দিয়ে এশিয়া কাপ মিশন শুরু করে আফ্রিদির দল। দ্বিতীয় ম্যাচে আরব আমিরাতের বিপক্ষেও কোনঠাসা হয়ে পড়ে পাকিস্তান। তবে উমর আকমল ও শোয়েব মালিকের মধ্যকার অবিচ্ছিন্ন ১১৪ রানের জুটির ওপর ভর করে ৭ উইকেটের স্বস্তির জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে পাক শিবির।
পাকিস্তানের চেয়েও বাংলাদেশ স্বস্তিতে থাকার কারণ হলো, বুধবার বাংলাদেশ হেরে গেলেও অঙ্কের হিসেবে মাশরাফিদের ফাইনালে উঠার সম্ভাবনা থাকবে। তবে বাংলাদেশের কাছে হেরে গেলেই ফাইনালের স্বপ্ন চুরমার হবে পাকিস্তানের। এই বিষয়টির কারণেই ‘প্রচ্ছন্ন’ এক চাপ নিয়ে মাঠে নামবে আফ্রিদির দল।
বাংলাদেশের দুর্ভাবনার বড় কারণ মুস্তাফিজুর রহমানের ইনজুরি। ইনজুরির কারণে এশিয়া কাপ থেকে ছিটকে পড়েছেন কাটার মাস্টার। মুস্তাফিজের না থাকাটা পাকিস্তান শিবিরকে অনেকটাই স্বস্তি দেবে সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
মুস্তাফিজের অভাব যে পূরণীয় নয় সেটি মানেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফিও, ‘মুস্তাফিজ চলে যাওয়ায় একটা ঘাটতি তো থাকবেই। ওর জায়গাটা আসলে পূরণ করার মতো বিশ্বে কোনো বোলার নেই। তাই মুস্তাফিজের জায়গায় যে খেলবে তার জন্য পরিস্থিতি অনেক চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ নিয়ে আমরা ভাবছি না। এখন সামনের তাকানোর সময় আমাদের। যারা আছে তাদেরকে নিয়েই খেলতে হবে। সবাই যার যার জায়গা থেকে সেরাটা দিতে পারলে সহজেই ম্যাচ জয় করতে পারব আমরা।’
তবে তামিম ইকবাল দলে ফেরায় কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে বাংলাদেশ শিবিরে। সন্তান-সম্ভবা স্ত্রীর পাশে থাকার কারণে এশিয়া কাপ থেকে নিজের নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন তামিম। সপ্তাহের শুরুতে স্ত্রীর কোল-জুড়ে সন্তানের আগমনের পর বাংলাদেশে ফিরেই অনুশীলনে যোগ দেন এই ড্যাশিং ওপেনার। মুস্তাফিজের ইনজুরির কারণে সোমবার তামিমকে স্কোয়াডে যুক্ত করা হয়। তামিম ফেরায় ওপেনিং নিয়ে দুর্ভাবনা অনেকটাই কমে গেল বাংলাদেশের।
পাকিস্তানের শক্তির মূল জায়গা বোলিং। আর সেটাই আবার চিন্তার মূল কারণ বাংলাদেশের। মোহাম্মদ আমির, মোহাম্মদ সামি, মোহাম্মদ ইরফান ও ওয়াহাব রিয়াজ- এই চারজন যেকোনো শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনকে নিমিষেই গুঁড়িয়ে দিতে পারেন। ফলে বুধবার জিততে হলে অবশ্যই পাকিস্তানের পেস আক্রমণ ভালোভাবে সামলাতে হবে তামিমদের।
বুধবারের ম্যাচে বাংলাদেশের হয়ে চোখ থাকবে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা সাব্বির রহমান ও এবারের এশিয়া কাপে প্রথমবারের মতো খেলতে নামা তামিম ইকবালের প্রতি। ভারতের বিপক্ষে ৪৪ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলার পর রোববার শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৫৪ বলে ১০টি চার ও ৩টি ছক্কার সাহায্যে ৮৪ রানের ‘অনবদ্য’ ইনিংস উপহার দেন সাব্বির। বুধবার গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে এই তরুণ উদীয়মান ক্রিকেটারের কাছ থেকেও এমন পারফরম্যান্স চাইবে টাইগার সমর্থকরা।
অন্যদিকে পাকিস্তান সুপার লিগে (পিএসএল) পেশোয়ার জালমির হয়ে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স উপহার দেয়া তামিম এবারের এশিয়া কাপে নিজের প্রথম ম্যাচে দলের হয়ে বড় ইনিংস খেলতে পারেন কি না সেটিই দেখার বিষয়।
পাকিস্তানের হয়ে আলো কাড়তে পারেন পেসার আমির। ভারতের বিপক্ষে ‘অবিস্মরণীয়’ এক বোলিং স্পেলে ধোনির দলকে কাঁপিয়ে দেয়া আমির সোমবারও দুর্দান্ত পারফরম্যান্স উপহার দেন। আরব আমিরাতের বিপক্ষে সেই ম্যাচটিতে ৪ ওভার বোলিং করে মাত্র ৬ রান দিয়ে ২ উইকেট নেন তিনি। বুধবার বাংলাদেশের বিপক্ষেও এই বাঁ-হাতি পেসার ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারেন।
পাকিস্তানের ব্যাটিংয়ের অন্যতম ভরসা উমর আকমল। বাংলাদেশের বিপক্ষে নায়ক হয়ে উঠতে পারেন তিনি। এছাড়া পিএসএলের একমাত্র সেঞ্চুরিয়ান শারজিল খান আগের দুই ম্যাচে নিজেকে প্রমাণ করতে না পারলেও বুধবার বাংলাদেশের বিপক্ষে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারেন তিনি। শোয়েব মালিকের মতো অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানকে যত দ্রুত সাজঘরে ফেরানো যায় বাংলাদেশের জন্য ততই মঙ্গল।
বাংলাদেশের হয়ে আলোচনায় রয়েছেন নাসির হোসেনও। মোহাম্মদ মিঠুন বা নুরুল হাসান সোহানের যেকোনো একজনকে সরিয়ে ব্যাটিংয়ের শক্তি বাড়াতে এই টাইগার অলরাউন্ডারকে প্রথমবারের মতো একাদশে নামানো হতে পারে। ফলে ম্যাচ-জয়ী পারফরম্যান্স উপহার দিতে পারেন নাসিরও।
মঙ্গলবার ভারতের কাছে শ্রীলঙ্কা হেরে যাওয়ায় বাংলাদেশের ফাইনালে উঠার পথ আরো সহজ হয়ে গেল। এমনকি পাকিস্তানের কাছে বুধবার হেরে গেলেও ফাইনালে উঠার সুযোগ থাকবে বাংলাদেশের। বাংলাদেশ যদি পাকিস্তানের কাছে হেরে যায়, আর পাকিস্তান যদি শেষ ম্যাচে শ্রীলঙ্কার কাছে হেরে যায় তবে ফাইনালে ভারতের সঙ্গী নির্ধারণে রানরেটের হিসেব সামনে চলে আসবে।
রানরেটের দিক থেকে বাংলাদেশ স্বস্তিজনক অবস্থানে রয়েছে। বাংলাদেশের রান রেট আপাতত +০.৪৮৩; সেই তুলনায় অনেকটাই পিছিয়ে আছে শ্রীলঙ্কা (-০.২৯২) ও পাকিস্তান (-০.৪৯৪)। তবে মাশরাফির দল নিশ্চয়ই এমন কঠিন সমীকরণে যেতে চাইবে না। বুধবার জয় দিয়ে রাঙিয়েই ফাইনালে ভারতের সঙ্গী হওয়ার লক্ষ্য নিয়েই মাঠে নামবে লাল সবুজের বাংলাদেশ।
Post a Comment