অদ্ভুতুড়ে 4:03 AM

হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার গল্প আমরা সবাই জানি। এই হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা খুব সহজেই শিশুদের মন জয় করে নিতেন। তারপর ইঁদুর তাড়ানোর দায়িত্ব পড়ে তার উপর। বাস্তবের হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার সাথেও রয়েছে শিশু ও ইঁদুরের সম্পর্ক। বিশ্ববিখ্যাত এই কার্টুনিস্ট এর জীবনের শুরুটা খুবই রোমাঞ্চকর। ওয়াল্ট ডিজনির জীবনের বিভিন্ন খুঁটিনাটি বিষয় এই পেজটিতে তুলে ধরা হয়েছে।
 
 
 
জন্ম ও পরিবার
১৯০১ সালের ৫ ডিসেম্বর আমেরিকার শিকাগো শহরে জন্মগ্রহণ করেন ডিজনি। জন্মটা নিতান্তই একটি গরিব পরিবারে। বাবা এলিয়েস ডিজনি এবং মা ফ্লোরা ডিজনির সংসারে পঞ্চম সন্তান হিসেবে ওয়াল্ট ডিজনি জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার পূর্ব পুরুষরা ছিলেন আইরিশ এবং মায়ের পূর্ব পুরুষরা এসেছিলেন জার্মানী থেকে। ওয়াল্ট ডিজনির বাবা এলিয়েস ডিজনি ছিলেন ছুতার মিস্ত্রী। সাত জনের সংসার নিয়ে অভাবের তাড়নায় শহরে টিকে থাকতে না পেরে শহর ছেড়ে মিসৌরীতে চলে যান তারা। গ্রামে এসে এক খামারে কাজ শুরু করেন এলিয়েস ডিজনি। কিন্তু একসময় তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর গ্রাম ছেড়ে কানসাস শহরে এসে নতুন করে জীবন শুরু করেন ডিজনিরা।
 
কে এই ওয়াল্ট ডিজনি?
ওয়াল্ট ডিজনি হচ্ছেন বিশ্ববিখ্যাত এক কার্টুনিস্টের নাম। মিকি মাউস এর নাম আমরা নিশ্চয়ই শুনেছি। এই মিকি মাউস সহ আরও অনেক বিশ্ববিখ্যাত কার্টুনের জনক হচ্ছেন এই ওয়াল্ট ডিজনি। এই ওয়াল্ট ডিজনির হাত ধরে নির্মিত হয়েছে বিশ্ববিখ্যাত বহু অ্যানিমেশন মুভি।
 
ইঁদুর-বিড়ালের সাথে সখ্যতা যেভাবে গড়ে ওঠে
শহর ছেড়ে মিসৌরীতে আসার পর ওয়াল্ট ডিজনির বন্ধু ছিল ইদূর, বিড়াল, কুকুর, হাস-মুরগী। তার বাবা যেই খামারে কাজ করতেন সেই খামারের ঝোপের ধারে দাঁড়িয়ে দেখতেন ইঁদুর, বিড়াল, খরগোশদের দৌঁড়াদৌঁড়ি। ওয়াল্ট ডিজনিদের পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে একমাত্র বোনটি হচ্ছে ‘রুথ’। বোনের সাথে ওয়াল্ট ডিজনির বেশ ভালো সম্পর্ক ছিল। বলা চলে দুজন খুব ভালো বন্ধু ছিলেন। কেননা তারা দুজন মাত্র দুই বছরের ছোট-বড়। বোনের কাছ থেকে প্রতিদিন গল্প শোনা চাই-ই ওয়াল্ট ডিজনির। বোনও প্রতিদিন বানিয়ে বানিয়ে ভাইকে বিভিন্ন গল্প শোনাতেন। একদিন ওয়াল্ট ডিজনির বোন দেখেন তাদের ঘরে রাখা পুডিং এর থালার পাশে একটি ইঁদুর ঘুর ঘুর করছে। এর আগেও সে অনেক ইঁদুর দেখেছে। কিন্তু এই ইঁদুরটি খুব সুন্দরভাবে সারা ঘরময় নেচে বেড়াচ্ছে। যা দেখে ওয়াল্ট ডিজনির বোন ডিজনিকেও ডেকে আনে। দুই ভাইবোন মিলে মুগ্ধ হয়ে দেখতে লাগলো ইঁদুরের ছোটাছোটি। কিন্তু ঘরে ডিজনির মায়ের পা পড়তেই ইঁদুরটি পালিয়ে যায়। এরপর থেকে দুই ভাই-বোনের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এই ইঁদুর। সারাক্ষণ তারা এই ইঁদুর নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
 
 
 
ছবি আাঁকার শুরু
ওয়াল্ট ডিজনির বয়স যখন সাত বছর তখন থেকে ছবি আঁকা শুরু করেন তিনি। অন্য কোনো বিষয় নয়, শুধুমাত্র বিভিন্ন ধরনের ইঁদুরেরই ছবি আঁকতেন ডিজনি। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে অন্য বিষয়েরও ছবি আঁকতেন। এই সময়েই তার আঁকা ছবির বেশ চাহিদা তৈরি হয়। তাদের গ্রামে কোনো জন্মদিনের অনুষ্ঠান হলে ঘর সাজানোর জন্য ডিজনির কাছ থেকে ছবি কিনে নিতেন গ্রামবাসী। তবে টাকার বিনিময়ে নয়, রং পেন্সিল কিংবা চকলেটের বিনিময়ে ডিজনি তার আঁকা ছবিগুলো বিক্রি করতেন।   
 
মিসৌরী ছেড়ে কানসাস চলে আসা
একসময় বড় সংসার নিয়ে শহরে টিকতে না পেরে শিকাগো ছেড়ে মিসৌরী চলে যায় তার পরিবার। সেখানে গিয়ে তার বাবা এক খামারে কাজ নেন। কিন্তু অসুস্থ হয়ে পড়ায় খামারে কাজ করা তার পক্ষে আর সম্ভব হয়ে ওঠে না। তাই আবার পরিবার নিয়ে মিসৌরী ছেড়ে কানসাসে পাড়ি জমান। কানসাসে এসে তার বাবা সংবাদপত্রের এজেন্ট হয়ে সংবাদপত্রের ব্যবসা শুরু করলেন আর ছেলে ওয়াল্ট ডিজনিকে নিয়োজিত করেন হকার হিসেবে। এভাবে সাত বছর তার বাবা সংবাদপত্রের ব্যবসা করেন। হাতে কিছু টাকা-পয়সা জমার পর তার বাবা সংবাদপত্রের ব্যবসা ছেড়ে দিয়ে পার্টনারশীপে জেলি তৈরির ব্যবসায় শুরু করেন।
 
পড়াশোনা
অভাবের সংসার ও বাবার কাজে সহযোগিতার জন্য স্কুলে পা রাখা হয় নি ডিজনির। দীর্ঘ ১৬ বছর পর স্কুলে যাওয়ার সুযোগ হয় ডিজনির। তার বাবা জেলির ব্যবসা শুরু করার পর ডিজনি মূলত বেকার হয়ে পড়েন। তাই তার বাবা তাকে স্কুলে ভর্তি করে দেন। কিন্তু পড়াশোনায় মন ছিল না ওয়াল্ট ডিজনির। ডিজনি যেই স্কুলে পড়তেন সেই স্কুল থেকে ম্যাগাজিন বের করা হতো। ডিজনি যখন পড়তেন তখন সেই ম্যাগাজিনের আর্ট এডিটর এর দায়িত্ব পড়ে ডিজনির উপর। নিজের জন্মগত মুন্সিয়ানার পরিচয় দিয়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসেন ওয়াল্ট ডিজনি। কিন্তু একে তো পড়াশোনায় মন নেই, তার উপর স্কুলের পড়াশোনার চাপ সবমিলিয়ে পড়াশোনার সাথে নিজেকে খাপ খাওয়াতে ব্যর্থ হয়ে পড়াশোনার ইতি ঘটে ওয়াল্ট ডিজনির। 
 
এরপরের জীবন
পড়াশোনা ছেড়ে দেওয়ার পর তার বাবা তাকে জেলির ব্যবসায় হাত লাগাতে বলেন। কিন্তু ডিজনির মন পড়ে ছিল আঁকাআঁকির দিকে। তাই বাবার অবাধ্য হয়ে কানসাসের ছোট একটি ষ্টুডিওতে কাজ শুরু করেন তিনি। ১৯১৮ সালে আমেরিকার সেনাবাহিনীতে নাম লেখাতে গেলে বয়স কম থাকার কারণে ডিজনিকে ফিরিয়ে দেয়া হয়। সঙ্গে সঙ্গে তিনি স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে আন্তর্জাতিক রেডক্রসে যোগদান করেন। সে সময় ১ম বিশ্ব যুদ্ধ চলছিল। সে বছর তাকে ফ্রান্সে পাঠানো হয়। সেখানে তিনি অ্যাম্বুলেন্স চালক হিসেবে এক বছর কাজ করেন। মজার ব্যাপার হলো, যে কাপড় দিয়ে তার অ্যাম্বুলেন্সটি ঢাকা ছিলো সেই ঢাকনা তিনি ভরে রেখেছিলেন নানা ধরনের ছবি এঁকে। ১৯১৯ সালে ছুটি পান এই চাকরি থেকে। যুদ্ধ থেকে ফেরার পর আবার শুরু করেন ছবি আঁকার যুদ্ধ। এ সময় আঁকার হাতটিকে আরও ঝানু করে তৈরি করার জন্য ‘কমার্সিয়াল আর্টসে’ শিক্ষানবিস হিসেবে যোগ দেন। এখানে ওয়াল্ট ডিজনির সাথে পরিচয় হয় ‘ইউব ওয়ার্কাস’ এর। দুজনের মধ্যে একসময় ভালো বন্ধুত্বও গড়ে ওঠে। ‘ইউব ওয়ার্কাস’ ছিলেন প্রতিভাবান একজন পরিশ্রমী শিল্পী। অ্যানিমেশন জগতের স্রষ্টা হিসেবে সকলে ওয়াল্ট ডিজনি এর নাম জানলেও এই অ্যানিমেশন এর সৃষ্টিতে ‘ইউব ওয়ার্কাস’ এরও অনেকটা অবদান রয়েছে। তারা দুজন মিলে ১৯২২ সালে প্রতিষ্ঠা করেন একটি বিজ্ঞাপন সংস্থা। কিন্তু কানসাস শহরটি ছিল খুব ছোট্ট একটি শহর। তাই এই ছোট্ট শহরে তাদের এই বিজ্ঞাপন সংস্থা সেভাবে ডালপালা মেলতে পারেনি। এরপর মাত্র ২০ ডলার হাতে নিয়ে ওয়াল্ট ডিজনি পাড়ি দেন ক্যালিফোর্নিয়ায়। সময়টা ছিল ১৯২৩ সাল। সেখানে গিয়ে হলিউডের বিখ্যাত ‘ইউনিভার্সাল স্টুডিও’র সাথে যোগাযোগ শুরু করেন। ‘ইউনিভার্সাল স্টুডিও’ সেসময় কিছু কাজ ছোট ছোট প্রতিষ্ঠান থেকে করিয়ে নিত। ভাগ্যক্রমে সেরকম একটি কাজ পায় ওয়াল্ট ডিজনি। এরকম ছোট ছোট কাজ করার মাধ্যমে বড় হতে থাকে ডিজনির প্রতিষ্ঠান। ১৯২৭ সালের দিকে এসে আস্তে আস্তে পাল্টে যেতে থাকে ডিজনির জীবন।
 
বিয়ে
১৯২৫ সালের ১৩ জুলাই তিনি লিলিয়ান বাউন্ড নামের এক সহকর্মীকে বিয়ে করেন। ডায়েন ও শ্যারন নামে তাদের দুটি মেয়ে আছে।
 
সবাক চলচ্চিত্রের মাধ্যমে যাত্রা শুরু
১৯২৭ সাল পর্যন্ত হলিউডে ছিল নির্বাক চলচ্চিত্রের প্রচলন। এরপর শুরু হয় সবাক চলচ্চিত্রের পথচলা। এসময় ডিজনির মাথায় ভর করে কার্টুন ফিল্ম তৈরির চিন্তাভাবনা। সেই ভাবনা থেকেই ১৯২৮ সালে নির্মাণ করেন ‘অসওয়াল্ড, দি লাকি র‌্যাবিটা’। মুভিটি কিছুটা সফলতার মুখ দেখেছিল। তবে এর আগে ডিজনি তৈরি করেন একটি অ্যানিমেটেড কার্টুন সিরিজ। ‘অ্যালিস ইন কার্টুনল্যান্ড’ নামের এই সিরিজটির বেশ কয়েকটি পর্বও তৈরি করেছিলেন কিন্তু সফলতা অর্জন করতে পারেননি। এই পর্যায়ে ডিজনির সাথে আবার যোগ দেন তার বন্ধু ‘ইউব ওয়ার্কাস’।
 
মিকি মাউসের যাত্রা শুরু
১ম চলচ্চিত্রে কিছুটা সাফল্য পাওয়ার পর দুই বন্ধু মিলে পরিকল্পনা করেন ‘মিকি মাউস’ নিয়ে কাজ করার। তবে প্রথম দিকে কিন্তু এটির নাম ‘মিকি মাউস’ ছিল না। তখন নাম ছিল ‘মটিমার’। ডিজনির এই নামটি খুব একটা পছন্দ ছিল না। শেষমেষ ডিজনির স্ত্রী ‘লিলিয়ান’ নাম পরিবর্তন করে রেখেছিলেন ‘মিকি মাউস’। এরপর যাত্রা শুরু হয় ‘মিকি মাউস’ এর। ‘ইউব ওয়ার্কাস’ শুরু করেন ‘মিকি মাউস’ এর বিভিন্ন ধরনের ছবি আঁকা। আর ডিজনি সেই কার্টুনগুলোকে চরিত্রে রূপ দিয়ে মানুষের কাছে পৌঁছে দিতেন। প্রথম দিকে তারা নির্মাণ করেন ‘প্লেন ক্রেজি’ ও ‘গ্যালোপিন গাউচো’ নামের দুটি নির্বাক মুভি। কিন্তু প্রথম দিকে দর্শক খুব একটা গ্রহণ করেনি তাদের এই নির্বাক চরিত্রটিকে। কেননা সে সময় মানুষ আস্তে আস্তে নির্বাক চলচ্চিত্র থেকে সবাক চলচ্চিত্রের দিকে হাঁটা শুরু করে দিয়েছে। তাই ডিজনি তার পরিকল্পনায় কিছুটা পরিবর্তন আনেন। এবার তিনি তার নির্বাক চরিত্রের মুখে কথা বলাতে শুরু করেন। ব্যাস শুরু হয়ে গেল সফলতার যাত্রা। তাদের নির্মিত ‘স্টীমবোট উইলি’ মুভিটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে। ১৯২৮ সালে নিউইয়র্কে এই মুভিটি মুক্তি পায়। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই আমেরিকার সীমানা ছাড়িয়ে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে ডিজনির এই অ্যানিমেটেড মুভির কথা।
 
জনপ্রিয় হওয়ার পেছনের কথা
ওয়াল্ট ডিজনি যে চরিত্রগুলো নিয়ে কাজ করতেন সেগুলো হলো এক একটি প্রাণীদের কার্টুন। দর্শকদের মাথায় খেলা করতে শুরু করে যে, কিভাবে পরিচালক এগুলোকে চরিত্রে রূপদান করছেন। তবে এই কাজটি করা খুব একটা সহজ ছিল না। এজন্য ‘ইউব ওয়ার্কাস’ ও ‘ডিজনি’কে অনেক পরিশ্রম করতে হয়। কেননা সাধারণত পর্দায় যখন মুভিগুলোর প্রক্ষেপণ হয় তখন সেকেন্ডে চব্বিশটি করে স্থিরচিত্র পর পর প্রক্ষিপ্ত হয়ে গতিশীলতার সৃষ্টি করে। রক্তমাংসের কোনো প্রাণীকে দিয়ে এরকম অভিনয়ের ক্ষেত্রে তেমন কোনো সমস্যা হয় না। কিন্তু ডিজনিদের তৈরি এসব অ্যানিমেটেড মুভির ক্ষেত্রে – একটি দশ মিনিটের কার্টুন ছবি তুলতে প্রয়োজন হয় ১৪ হাজার ৪০০ ছবির। প্রতি সেকেন্ডে ২৪ টি ছবি ক্যামেরার সামনে ধরতে হয়। আর যদি দেড় ঘন্টার কোনো কার্টুন ছবি তৈরি করা হয় তাহলে সেজন্য প্রয়োজন হয় ১ লক্ষ ২৯ হাজার ৬০০ ছবির। বুঝতেই পারছেন এতগুলো ছবি আঁকা চাট্টিখানি কথা নয়।
 
‘মিকি মাউস’ এর বিশ্বজয়
১ম সবাক মুভি ‘স্টীমবোট উইলি’র সফলতা অর্জনের পর জোরেশোরে শুরু করেন ‘মিকি মাউস’ এর পরবর্তী ছবির কাজ। এবার ‘মিকি মাউস’কে নিয়ে ‘সিলি সিম্ফনি’ নামে সিরিজ নির্মাণের চিন্তাভাবনা করেন। এই সিরিজের ১ম মুভি ‘স্কেলিটন ড্যান্স’ মুক্তি পায় ১৯২৯ সালে। এরপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয় নি ‘মিকি মাউস’কে। পরবর্তী ১০ বছরে এই সিরিজের ৭০ টি মুভি নির্মাণ করা হয়। ১৯৩৩ সালে ডিজনি অ্যানিমেশন মুভির জগতে ১ম রঙিন মুভি নির্মাণ করেন। মুভিটির নাম ‘ফ্লাওয়ার্স এন্ড ট্রিজ’।
 
সাত বামনের কিছু কথা
‘মিকি মাউস’ এর জনপ্রিয়তার পর ডিজনি নির্মাণ করেন ‘স্নো হোয়াইট এন্ড দি সেভেন ডোয়াফর্স’ বা ‘সাত বামন’। ১৯৩৮ সালে মুক্তি পাওয়া এই মুভিটি থেকে ডিজনি আয় করেন আড়াই কোটি টাকা। এতদিন শিশুরা মুখে মুখে রূপকথার এই কাহিনী শুনে এসেছিল এবং সেটা যখন অ্যানিমেটেড চলচ্চিত্রের মাধ্যমে প্রেক্ষাগৃহের পর্দায় দেখানো হল তখন তাদের মনে হয়েছিলতারা সত্যিকারের সেই মায়াবী মোহনীয় রাজ্যে চলে গেছে। ১৯৩৪ সাল থেকে ১৯৩৭ সাল পর্যন্ত লম্বা সময় ধরে চলে এই কার্টুন তৈরির কাজ।
 
ডিজনি ওয়াল্ট কোম্পানির কিছু কথা
ডিজনি ওয়াল্ট এর এই অ্যানিমেটেড মুভিগুলো নির্মাণ করা হতো তারই প্রতিষ্ঠিত ‘ডিজনি ওয়াল্ট’ নামে প্রোডাকশন কোম্পানি থেকে। কোম্পানিটির বর্তমান লোগো ওয়াল্ট ডিজনি লেখাটির পাশাপাশি একটি দুর্গ ব্যবহৃত হতে দেখা যায়। ২০০০ সাল থেকে বর্তমান লোগোটি ব্যবহার করা শুরু হয় এবং ২০০৬ সালে এসে এই লোগোতে যুক্ত হয় কয়েকটি উজ্জ্বল তারা। ১৯৩৪ সালে তার প্রোডাকশন কোম্পানির কর্মীর সংখ্যা দাঁড়ায় সাতশ’র বেশি। নিজের ছবিগুলির পারিবেশনের দায়িত্ব তিনি নিজেই নিয়েছিলেন। ১৯৩৪ সালে তিনি লন্ডন ও প্যারিসে তার পরিবেশ সংস্থার শাখা অফিস  খুলেন।
 
ডিজনিল্যান্ডের কিছু কথা
ডিজনি ওয়াল্ট তার নির্মিত অ্যানিমেটেড কার্টুন মুভিগুলোর মাধ্যমে শিশুদের কল্পনার জগতে নিয়ে যেতেন। সেই শিশুদের জন্য তিনি বাস্তবের এক ডিজনিল্যান্ড তৈরি করেন। যেখানে শিশুরা তাদের কল্পনার সাথে বাস্তব মিলিয়ে দেখতে পারেন। আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ায় অবস্থিত এই পার্কটি ১৯৫৫ সালে উদ্বোধন করা হয়। ডিজনিল্যান্ডের আরেক নাম ম্যাজিক ল্যান্ড। ওয়াল্ট ডিজনির বিভিন্ন মুভির চরিত্রগুলো এই পার্কে তুলে ধরা হয়েছে। অত্যন্ত সুন্দরভাবে এসব চরিত্রগুলিকে সাজানো হয়েছে যেখান থেকে শিশুরা জানতে পারবে বিভিন্ন অতীত ইতিহাস। 
ওয়াল্ট ডিজনি এর কিছু টুকরো তথ্য
  • ডিজনি ছিলেন একজন সফল শিল্পী, সফল চলচ্চিত্র পরিচালক, চলচ্চিত্র নির্মাতা, স্ক্রিপ্ট লেখক, কণ্ঠস্বরদানকারী, দোভাষী এবং কার্টুন ছবি নির্মাতা।
  • ১৯২৮ সালের ১৮ নভেম্বর প্রথম মিকিমাউস আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম কার্টুনটির নাম ছিলো ‘স্টিমবোট হুইল’। এটাতে মিকিমাউসের ভূমিকায় কণ্ঠ দেন ওয়াল্ট ডিজনি নিজে। অবশ্য ১৯৪৬ সাল পর্যন্ত তিনি একটানা মিকিমাউসের ভূমিকায় কণ্ঠদান করে গেছেন।
  • ওয়াল্ট ডিজনির প্রতিষ্ঠার পেছনে তার মা ও বড় ভাই রয় ডিজনির অবদান ছিলো উল্লেখ করার মতো।
  • ডিজনি ওয়াল্ট একাই ৫৭৬টি কার্টুন-চলচ্চিত্র প্রযোজনা করেছেন।
  • পরিচালনা করেছেন  ১১১টি।
  • তিনি নিজে অভিনয় করেছেন ৯টিতে।
  • অস্কার পেয়েছেন ২২ বার!
  • অস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছিলেন ৫৯ বার!
  • অন্যান্য নামীদামী পুরস্কার পেয়েছেন আরও ৪১টি।
 
মৃত্যুবরণ
১৯৬৬ সালে ডিসেম্বর মাসে তার শরীরটা হঠাৎ খুবই খারাপ হতে থাকে। ১৯৬৬ সালের ১৫ই ডিসেম্বর এই দুনিয়া থেকে পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নেয় চিরন্তন এই শিশু মানবটি। ডিজনি যেদিন মারা যান তার ঠিক ১০ দিন পরই ছিল বড়দিন। সেবার বড়দিনে শিশুরা কোনো আনন্দ পালন করেননি। তাদের প্রিয় এই বন্ধুটির মৃত্যুর সংবাদে তারা ভুলেই গিয়েছিল বড়দিন মানে আনন্দ।

Post a Comment

'; (function() { var dsq = document.createElement('script'); dsq.type = 'text/javascript'; dsq.async = true; dsq.src = '//' + disqus_shortname + '.disqus.com/embed.js'; (document.getElementsByTagName('head')[0] || document.getElementsByTagName('body')[0]).appendChild(dsq); })();
Powered by Blogger.