অদ্ভুতুড়ে 11:14 PM
যুক্তরাজ্যে মাত্র ২১ দিন পর সাধারণ নির্বাচন। কিন্তু দেশটির রাস্তায় কোনো মিছিল, সমাবেশ, মাইকের আওয়াজ নেই। দেয়ালে পোস্টার বা সুবিশাল বিলবোর্ডও চোখে পড়ে না। এসব ছাড়াই চলছে নির্বাচনী প্রচার। সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের কথা ভেবে এভাবে কোথাও কারও অসুবিধা না ঘটিয়েই চলে যুক্তরাজ্যের নির্বাচনী প্রচার। গত মঙ্গলবার স্থানীয় সময় বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে পূর্ব লন্ডনের বেনজনসন প্রাইমারি স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে নিজের নির্বাচনী প্রচারপত্র (লিফলেট) বিলি করছিলেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রার্থী রুশনারা আলী। তিনি লেবার দলের সাবেক এমপি। বেথনাল গ্রিন এন্ড বো আসন থেকে দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য নির্বাচনী করছেন। স্কুল ছুটির পর সন্তানদের নিতে আসা অভিভাবকদের হাতে প্রচারপত্র দিচ্ছিলেন তিনি। সঙ্গে আরও পাঁচ-ছয় জন। এভাবেই নির্বাচনী প্রচার চলছে কি না-জানতে চাইলে রুশনারা হেসে বলেন, ‘এটা নির্বাচনী সংস্কৃতির ব্যাপার। আমরা ভোটারদের সঙ্গে ঘরে ঘরে গিয়ে কথা বলি (ডোর নকিং)। জনবহুল জায়গায় দাঁড়িয়ে মানুষের হাতে লিফলেট ধরিয়ে দিই।’ রুশনারা বলেন, রাস্তায় মিছিল, সমাবেশ মানুষের ভোগা‌ন্তি সৃষ্টি করে।

 এতে মানুষ রাজনৈতিক নেতাদের প্রতি বিরক্ত হয়। দেয়ালে পোস্টার লাগানো হয় কি না-জানতে চাইলে পাল্টা প্রশ্ন করেন নির্বাচনী প্রার্থী রুশনারা, কার দেওয়ালে আপনি পোস্টার লাগাবেন? নির্বাচনী প্রচারের মূল উদ্দেশ্যই হলো দল এবং নিজের চিন্তা ও প্রতিশ্রুতি ভোটারদের কাছে পৌঁছে দেওয়া। তাঁরা কেন ভোট দেবেন, সেটি বুঝিয়ে বলা। রুশনারা জানান, যুক্তরাজ্যে নির্বাচনী প্রার্থীরাও বিভিন্ন সময় সভা-সমাবেশ করেন। সেগুলো হলের ভেতরে, বাইরে নয়। এ ফাইভ সাইজের কাগজে ছাপা রুশনারা আলীর দুই পাতার রঙিন প্রচারপত্রে গত পাঁচ বছরে তাঁর কার্যক্রম বর্ণনার পাশাপাশি এবারের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি তুলে ধরা হয়েছে। প্রথম পাতায় বড় করে রুশনারার ছবি


বে কোনো আদর্শিক বা দলীয় নেতার ছবি সেই পোস্টারে নেই। যুক্তরাজ্যে নির্বাচনী প্রচারের অংশ হিসেবে ভোটারদের আপ্যায়ন নির্বাচনী আচরণবিধির লঙ্ঘন বলে বিবেচিত হয়। নির্বাচনকে বলা হয় গণতন্ত্রের আসল খুঁটি। যুক্তরাজ্যে নির্বাচন আয়োজন ও প্রার্থী মনোনয়নের বেলায় প্রমাণ মেলে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষÿ নির্বাচনের পরিবেশ কতটা নিখুঁত ও নির্ঝঞ্ঝাট হতে পারে। ২০১১ সালে আনা ‘ফিক্সড টার্ম পার্লামেন্ট অ্যাক্ট’ অনুযায়ী আগামী ৭ মে নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। একই আইনের কারণে অস্বাভাবিক কিছু না ঘটলে প্রতি পঞ্চম বছরের মার্চ মাসের ৩০ তারিখ পার্লামেন্টের মেয়াদ হবে এবং মে মাসের প্রথম বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হবে নির্বাচন। আগে বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছাধীন ছিল। দলগুলোর প্রার্থী মনোনয়নের বিষয়টিও বেশ সুশৃঙ্খল। নির্বাচনের সময় আসার কয়েক বছর আগে থেকে প্রার্থী মনোনয়ন প্রক্রিয়া শুরু করেন। মনোনয়ন প্রত্যাশীদের কয়েক দফা বিতর্ক এবং দলের স্থানীয় সদস্যদের ভোটের মাধ্যমে তাঁরা বেশ আগেভাগেই দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করে। প্রার্থিতা নিশ্চিত হওয়া মাত্রই সংশ্লিষ্ট প্রার্থী পরবর্তী নির্বাচনের জন্য প্রচার চালাতে থাকেন। তফসিল ঘোষণার পর তা কেবল আনুষ্ঠানিক রূপ নেয়। যেসব এমপি অবসর নেবেন, তাঁরাও বেশ আগে-ভাগেই ঘোষণা দিয়ে দেন। যেমন হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড কিলবার্ন আসনে লেবার দলীয় এমপি গ্লেন্ডা জ্যাকসনের স্থলে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দিকির প্রার্থিতা নিশ্চিত হয় গত বছরের জুলাইয়ে। যুক্তরাজ্যে দলীয় নেতাদের একাধিক আসনে নির্বাচন করার সংস্কৃতি নেই। কনজারভেটিভ দলের প্রধান ডেভিড ক্যামেরন নির্বাচন করছেন ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ডশায়ারের উইটনি আসনে। অন্যদিকে লেবার দলের নেতা এড মিলিব্যান্ড নির্বাচন করছেন সাউথ ইয়র্কশায়ারের ডঙ্কাস্টার নর্থ আসনে। নির্বাচনী প্রচারে নেতারা শুধু উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে পার পান না। ওই উন্নয়নে খরচ কত হবে এবং ওই খরচের উৎস কী হবে, সেই হিসেবও তাঁদের দেখাতে হয়। অর্থের হিসেব ছাড়া প্রতিশ্রুতি এ দেশে ঠগবাজি হিসেবে বিবেচিত।

Post a Comment

'; (function() { var dsq = document.createElement('script'); dsq.type = 'text/javascript'; dsq.async = true; dsq.src = '//' + disqus_shortname + '.disqus.com/embed.js'; (document.getElementsByTagName('head')[0] || document.getElementsByTagName('body')[0]).appendChild(dsq); })();
Powered by Blogger.