ভোটকেন্দ্রে অযাচিত হস্তক্ষেপ হতে পারে।
ঢাকা উত্তর, দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এসব এলাকার বাইরের দলীয় সাংসদদের ওয়ার্ডভিত্তিক নির্বাচনী দায়িত্ব দিয়েছে আওয়ামী লীগ। সাংসদদের ভোট গ্রহণ পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডে দল-সমর্থিত মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী কার্যক্রম চালাতে বলা হয়েছে। নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন যে এর ফলে সরকারদলীয় সাংসদেরা ভোটকেন্দ্রে প্রভাব বিস্তারের সুযোগ পাবেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সাংসদদের নির্বাচনী কার্যক্রমে আইনগত বাধা না থাকলেও নৈতিকভাবে তা ঠিক নয়। তাঁরা এলাকায় থাকলে ভোটকেন্দ্রে অযাচিত হস্তক্ষেপ হতে পারে।
জানতে চাইলে স্থানীয় সরকারবিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, সাংসদেরা ওয়ার্ডভিত্তিক নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করলে আইনগতভাবে হয়তো তাঁদের কিছু বলা যাবে না। কিন্তু তাঁরা দল-সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে প্রভাব বিস্তার করবেনই। এটা অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে একটা প্রতিবন্ধকতা।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাংসদেরা ওয়ার্ডভিত্তিক দায়িত্ব পালন করলে তার প্রভাব প্রশাসনে পড়বে। তবে আশা করব, তাঁরা অযাচিত হস্তক্ষেপ করবেন না।’
রাজনৈতিক অঙ্গনে বিভিন্ন কারণে বিতর্কিত কয়েকজন সাংসদকে ঢাকায় নির্বাচনী দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন নারায়ণগঞ্জের শামীম ওসমান। তিনি ঢাকা দক্ষিণের ৫৩ নম্বর ওয়ার্ড পূর্ব জুরাইন ও মুরাদপুরের দায়িত্ব পেয়েছেন। ভোলার নূরুন্নবী চৌধুরী শাওন পেয়েছেন গোরান অর্থাৎ ২ নম্বর ওয়ার্ডের দায়িত্ব। ময়মনসিংহের ফাহমি গোলন্দাজ বাবেলকে দেওয়া হয়েছে ১৪ নম্বর ওয়ার্ড গজমহল, হাজারীবাগ, জিগাতলা, মধুবাজার ও আশপাশের কিছু এলাকার দায়িত্ব।
আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রে জানা যায়, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ৯৩টি ওয়ার্ডে এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ৪১টি ওয়ার্ডে নির্বাচনী দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে দলের ১৩৪ জন সাংসদকে। এসব দায়িত্বপ্রাপ্তদের অধিকাংশই ঢাকা ও চট্টগ্রামের বাইরের অন্যান্য জেলার সাংসদ। তিন সিটিতেই আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা ও স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে সাংসদেরা ইতিমধ্যেই কাজ শুরু করেছেন। এলাকাভিত্তিতে যেসব কেন্দ্রীয় নেতাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন বাহাউদ্দিন নাছিম, উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, এনামুল হক শামীম, পংকজ নাথ, মির্জা আজম, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, আব্দুল মতিন খসরু, রাজি উদ্দিন আহম্মেদ রাজু।
২২ এপ্রিল ঢাকা উত্তরের মেয়র পদপ্রার্থী আনিসুল হকের নির্বাচন সমন্বয়কারী ফারুক খান এবং দক্ষিণের মেয়র পদপ্রার্থী সাঈদ খোকনের নির্বাচন সমন্বয়কারী আবদুর রাজ্জাক স্বাক্ষরিত তালিকা সংশ্লিষ্ট সাংসদদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের থানাভিত্তিক দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
ঢাকার বাইরের সাংসদদের পাশাপাশি ঢাকা উত্তর, দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার সাংসদেরাও রয়েছেন নির্বাচনী মাঠে। কেবল মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও হুইপদের নির্বাচনী দায়িত্বের বাইরে রাখা হয়েছে।
ঢাকার বাইরের সাংসদদের ওয়ার্ডভিত্তিক নির্বাচনী দায়িত্ব দেওয়া সম্পর্কে অন্যতম নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ প্রথম আলোকে বলেন, সাংসদেরা ঢাকার বাসিন্দা এবং সংসদ ভবন ঢাকায়। তাঁরা দলীয়ভাবে প্রচার না চালিয়ে ব্যক্তিগতভাবে পছন্দমতো প্রার্থীর পক্ষে প্রচার চালাতে পারবেন।
দলীয় সাংসদদের ওয়ার্ডভিত্তিক নির্বাচনী দায়িত্ব দেওয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণের মেয়র প্রার্থী সাঈদ খোকনের নির্বাচন সমন্বয়কারী ও আওয়ামী লীগের কৃষিবিষয়ক সম্পাদক আবদুর রাজ্জাক প্রথম আলোকে বলেন, সাংসদেরা ওয়ার্ডে সার্বক্ষণিক কাজ করবেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচনী আচরণবিধি মেনেই দলীয় সাংসদ এবং কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্বাচনী দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে দলসমর্থিত মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের বিজয় নিশ্চিত করতেই সাংসদদের নির্বাচনী প্রচারের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এর আগে এলাকাভিত্তিক টিম থাকলেও ২২ এপ্রিল থেকে প্রতিটি ওয়ার্ডে একজন করে সাংসদকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মন্ত্রীরা সরাসরি নির্বাচনী কাজে না থাকলেও তাঁরা নির্বাচনসংক্রান্ত বৈঠকগুলোতে অংশ নিচ্ছেন। গত শুক্রবার রাতে লালবাগ এলাকায় নেতা-কর্মীদের নিয়ে বৈঠক করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম।
ঢাকা উত্তরে দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংসদদের উল্লেখযোগ্য ওয়ার্ড-১ গাজীপুরের জাহিদ আহসান রাসেল, ওয়ার্ড ২০ সিরাজগঞ্জের তানভীর ইমাম, ওয়ার্ড ৩৪ ফরিদপুরের আবদুর রহমান, ওয়ার্ড ৩২ মানিকগঞ্জের এ এম নাইমুর রহমান দুর্জয় প্রমুখ।
Post a Comment