অবাক লাগে যখন ভাবি প্রাণীর লোমশ চামড়া কিভাবে আমাদের পরিপাটি পরিধেয় বস্তু হয়ে উঠে । সবটা বিস্তারিত বলতে অঙ্ক সময়ের প্রয়োজন । পাঠক এর সময়ের কথা বিবেচনা করে যতটা সংক্ষেপে গুছিয়ে বলা যায় তাই চেষ্টা করলাম ।
কাঁচা চামড়া থেকে পরিধেয় বস্তু হয়ে উঠার ব্যাপারটা কিন্তু মটেও সহজ নয় । অর্থ, সময় ও শ্রমের সম্মিলন প্রয়োজন হয় । দেশের আনাচ কানাচে কসাই সমাজ জবে যাওয়া প্রাণি'র চামড়া ছড়ানোর কাজটি দক্ষতার সাথে সম্পন্ন করে থাকে । ছড়ানো চামড়া পলিথিন বিছিয়ে ব্রাইন দ্রবণ যৌগে কিছুদিন সংরক্ষণ করে থাকে এরা । ৭ দিন পর্যন্ত এভাবে সংরক্ষণ করতে হয় । আর এই সময়ের মধ্যে কসাই থেকে ছোট বড় ব্যবসায়ী'র হাত ঘুরে এসব চামড়া চলে আসে অবশেষে ট্যানারিতে । ট্যানারি'র মূল কাজকে প্রধানত বীম-হাউজ অপারেশন, ট্যানিয়ার্ড অপারেশন ও ফিনিশিং অপারেশন- এই তিন ভাগে ভাগ করা হয় । প্রত্যেকটি ভাগের মাঝে আবার রয়েছে অনেক গুলো উপভাগ ।
বীমহাউজ অপারেশন
i. চুবানো ও ধৌতকরণ : ট্যানারিতে আসা চামড়া প্রথমে বড় ড্রাম বা ভ্যাটে (vat) চুবিয়ে ভালমত ধূয়া হয় যাতে এর সাথে লেগে থাকা কাঁদা বা ময়লা ও লবণ দূর হয়।
ii. লোম ছড়ানোয় ও লাইমিং : এ ধাপে চামড়ায় লাইম যোগ করা হয় যেন লোম ছড়িয়ে যায়। এটি সম্পন্ন হতে কাজের ভিত্তিতে ১৮ ঘণ্টা থেকে এক সপ্তাহ সময় লাগে।
iii. ট্রিমিং ও ফ্লেশিং : এ ধাপে অপ্রয়োজনীয় মাংশল অংশ ছেঁটে নির্দিষ্ট সীমারেখা ঠিক করা হয়।
ট্যানিয়ার্ড অপারেশন
i. ডিলাইমিং ও বেটিং : পূর্বোক্ত লাইমিং দূর করার জন্য এসিড লবণ সহযোগে এ ধাপ সম্পন্ন করা হয়। বেটিং হচ্ছে এনজাইম হজমী প্রক্রিয়া। অবশ্যই নির্দিষ্ট PH (9-10) অর্জন করতে হয় এ ধাপে।
ii. পিকলিং : পিকলিং হচ্ছে এসিড যোগকরণ প্রক্রিয়া যা সালফিউরিক এসিড ও সাধারণ লবণ মিশিয়ে সম্পন্ন করা হয়। ফলে PH 3-4 এ নেমে আসে।
iii. ডিগ্রীসিং : এ ধাপে সারফেকট্যান্ট বা জৈব দ্রবণ মিশিয়ে চর্বি দূর করা হয়। ডিগ্রীসিং ধাপটি শুধুমাত্র শূকর ও ভেড়ার বেলায় খাটে।
iv. ট্যানিং : প্রাকৃতিক বা সিনথেটিক রাসায়নিক পদার্থের মাধ্যমে ট্যানিং করা হয়। ট্যানিং অনেক ধরনের হতে পারে। যেমন : ক্রোম ট্যানিং, ভেজিটেবল ট্যানিং, সিন্ট্যান্স ইত্যাদি। ক্রোম ট্যানিং ট্যানিং সম্পন্ন হতে মাত্র ৪ থেকে ২৪ ঘণ্টা সময় লাগে। কিন্তু ভেজিটেবল ট্যানিং সম্পন্ন করতে একদিন থেকে ছয় সপ্তাহ লেগে যায়।য়া
ফিনিশিং অপারেশন
i. স্যামিং : অতিরিক্ত আদ্রতা দূর করতে যান্ত্রিক উপায়ে স্যামিং করা হয়।
ii. শেভিং : প্রয়োজন ও চাহিদার ভিত্তিতে শেভিং মেশিনের মাধ্যমে এ ধাপ শেষ করা হয়।
iii. রি-ট্যানিং : চামড়ার গুনগত মান বজায় রাখার কখনো সখনো রি-ট্যানিং করা হয়ে থাকে।
iv. নিউট্রালাইজেশন : অগ্রহণীয় এসিড দূর করতে ও পরবতী ধাপের জন্য উপযুক্ত করতে মৃদু ক্ষার যোগে এ ধাপ সম্পন্ন করা হয়।
v. ডায়িং : এটি রং যুক্তকরণ প্রক্রিয়া। বিভিন্ন কালারিং দ্রব্যাদির মাধ্যমে চাহিদা ও কাজের ভিত্তিতে চামড়ার উপরিভাগ, অংশবিশেষ বা সম্পূর্ণ অংশে রং দেয়া হয়।
vi. ফ্যাট লিকারিং : প্রক্রিয়াজাত চামড়া নরম ও নমনীয় করতে এক ধরনের তেল সহযোগে এ ধাপ সম্পন্ন করা হয়।
vii. ড্রায়িং : ফিনিশিং এর উপযুক্ততার জন্য ড্রায়িং করা হয়।
viii. ফিনিশিং : চাকচিক্য ধরে রাখতে বা বাহ্যিক ঘর্ষণ এড়াতে ডাই বা পিগমেন্ট যুক্ত করে ফিনিশিং করা হয়।
উল্লেখ্য ভেজিটেবল ট্যানিং এ রি-ট্যানিং, ডায়িং ও ফ্যাট লিকারিং করা হয় না।
কমপক্ষে ২১ দিন সময় লাগে জবে যাওয়া প্রাণির চামড়া ছড়ানো থেকে শুরু করে ফিনিশিং পর্যন্ত । ট্যানারিতে এভাবে প্রক্রিয়াজাত ফিনিশিং চামড়া জুতো বা ব্যাগ প্রস্তুতকারি শিল্পে চলে যায় । হয়ে উঠে আমাদের পরিধেয় পরিপাটি । বেশিরভাগ অবশ্য রপ্তানি হয়ে যায় । বৈদেশিক রপ্তানি'র দিক থেকে দেশে এই প্রক্রিয়াজাত চামড়ার অবস্থান পঞ্চম ।

Post a Comment