মুম্বাই টেকফেস্ট-২০১৫ প্রতিযোগিতায় প্রথম চারটি স্থানের তিনটিই বাংলাদেশের দখলে।
![]() |
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) দল |
ততক্ষণে চোখ কপালে উঠে গেছে যখন ফ্রান্স, দক্ষিণ আফ্রিকা, মিসর, ভারত, ইন্দোনেশিয়া প্রভৃতি দেশের মেধাবীরা দেখতে পেলো যে, প্রতিযোগিতার চারটি শীর্ষস্থানের মাঝে তিনটিতেই রয়েছে বাংলাদেশের নাম। আর এতেই বিস্ময়ে যেন কথা বলা ভুলে গেছেন তাঁরা। কারণ এ কী করে সম্ভব যেখানে শীর্ষ চারটি দলের তিনটিই যে বাংলাদেশের নাম! বাংলাদেশকে তো এতদিন ক্ষুধা, দারিদ্র আর দুর্যোগের দেশ বলেই তাঁরা চিনতেন। কিন্তু মেধাবীদের দেশ হিসেবেও আজ তাঁরা বাংলাদেশকে জানতে পারলেন।
বাংলাদেশের তিনটি দলই এ সাফল্য লাভ করে ২–৪ জানুয়ারি ভারতের আইআইটি মুম্বাইয়ে অনুষ্ঠিত ‘টেকফেস্ট–২০১৫’ প্রতিযোগিতায় ‘ইন্টারন্যাশনাল রোবোটিকস চ্যালেঞ্জ’–এ। ‘বুয়েট এক্সপোনেন্সিয়াল’চূড়ান্ত প্রতিযোগিতায় শ্রীলঙ্কার মোরাতুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে মাত্র চার পয়েন্টের ব্যবধানে হেরে দ্বিতীয় স্থান লাভ করে। অপরদিকে এ প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশে অন্য দুটি দল শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘রোবোসাস্ট’ এবং ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (ডুয়েট) ‘টাইমআউট’ দল দু'টি যথাক্রমে তৃতীয় এবং চতুর্থ স্থান লাভ করে।
দেশে ফেরার পর কথা হয় আবুল আল আরাবীর সঙ্গে যিনি বুয়েট এক্সপোনেন্সিয়াল দলের একজন সদস্য। তিনি সাংবাদিকদের বলেন যে, ‘বাংলাদেশ থেকে এবার তিনটি দল অংশ নেওয়ায় আমাদের বিশ্বাস ছিল, আমরা এবার দেশকে ভালো কিছু উপহার দিতে পারব।’
খালেদ বিন মইনুদ্দিন এই দলের আরেকজন সদস্য। আরাবী ও খালেদের এই দলটি গত বছর আইআইটি কানপুরে অনুষ্ঠিত ‘টেকক্রিতি ১৪’-তে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ।
ভবিষ্যতে এশিয়ার গণ্ডি পেরিয়ে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় তাঁদের রোবটের জন্য স্বীকৃতি বয়ে আনা এটিই মূলত তাঁদের দুজনেরই প্রধান লক্ষ্য বলে তাঁরা জানান । তবে অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুযোগ-সুবিধার কথা নিয়ে বেশ হতাশাজনক কথা বের হলো খালেদের কণ্ঠ হতে, তিনি এ প্রসঙ্গে বলেন যে, ‘শ্রীলঙ্কা ও ভারতীয় প্রতিযোগীদের ক্ষেত্রে দেখেছি, তাঁদের রোবটগুলো অনেক উন্নত, কারণ তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজ দায়িত্বে শিক্ষার্থীদের জন্য উন্নতমানের যন্ত্রাংশ আমদানি করে দিয়েছে। আমাদের দেশে এমন ব্যবস্থা করা গেলে খুব ভালো হতো। যথাযথ সাহায্য পেলে রোবোটিকসে বাংলাদেশের পক্ষে অনেক দূর যাওয়া সম্ভব।’
![]() |
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রজুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি) দল |
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কোনো প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েই বাজিমাত করেছে প্রথমবারের মতো অংশ নেয়া শাবিপ্রবির রোবট দল ‘রোবোসাস্ট’। এই দলের সদস্যরা হলেন নওশাদ সজীব, সাখাওয়াত হোসেন, নুসরাত মুবিন আরা, রাগিব শাহরিয়ার ও ফারহানুল ইসলাম।
২০১৩ সালের শেষের দিকে বিভাগীয় শিক্ষক মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও অন্য শিক্ষকদের সহযোগিতায় ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (ডুয়েট) দলের এই রোবোটিকস-এর যাত্রা শুরু তবে এই দলটির পরবর্তীতে পিছনে ফিরে আর তাকাতে হয়নি । গত বছর আইইউটি ‘ইজোন্যান্স-২০১৪’-তে
চ্যাম্পিয়ন এমনকি আইআরসি বাংলাদেশ রাউন্ড থেকে রানারআপ হয়ে মিলে যায় এতে টিকিট হাতে চলে আসে মুম্বাইয়ের আর যেখানে দেখা মিলে সাফল্যের। রোবোটিকস-দলের অন্যতম সদস্য নওশাদ সজীব বলেন, ‘আমাদের সাফল্যের জন্য আমরা বিভাগীয় শিক্ষদের কাছে কৃতজ্ঞ।’
![]() |
ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (ডুয়েট) দল |
‘টেকফেস্ট–২০১৫’–এ বাংলাদেশ থেকে অংশ নেওয়া তিন নাম্বার দলটি হলো ডুয়েটের ‘টাইমআউট’ যার সদস্যরা হলেন রুপায়ন হালদার, পরিতোষ কুমার, মুসলিম উদ্দিন, পলাশচন্দ্র মণ্ডল ও উত্তম কুমার। সাফল্যের দিক দিয়ে কোন অংশে পিছিয়ে নেই এই টাইমআউট দলটি। গত বছর তাঁরা ‘টেকক্রিতি’তে অংশ নেওয়ার জন্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। সঙ্গে ‘আইইউটির মেক্সিলারেশনে’ চ্যাম্পিয়নও।
উল্লেখ্যযে, আন্তর্জাতিক রোবটিক চ্যালেঞ্জে-এ অংশ নেওয়ার পূর্বে বাংলাদেশে প্রাথমিক পর্বে অংশ নিতে হয়েছিল দলগুলোকে। ১৩ ও ১৪ নভেম্বর ২০১৪ সালের অনুষ্ঠিত বাছাই পর্বে নির্বাচিত হওয়ার বদৌলতে মুম্বাইয়ে অনুষ্ঠিত মূল প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের সুযোগ পান তাঁরা।
Post a Comment